• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯

শিক্ষা

শিক্ষকদের মধ্যে চলছে আলোচনা- সমালোচনা ঝড়

দুর্নীতির দায়ে বেতন বন্ধ, তবু হলেন শ্রেষ্ঠ শিক্ষক!

  • ''
  • প্রকাশিত ০৬ মে ২০২৪

এস এম হালিম মন্টু,নড়াইল প্রতিনিধি:

নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ী পুরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম এর বেশ কয়েকটি দুর্নীতির অভিযোগে বেতন বন্ধ ও দুদকের তদন্ত চলমান থাকা সত্তেও সম্প্রতি উপজেলা পর্যায়ে ‘শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক’ নির্বাচিত হওয়ায় নড়াইলে শিক্ষক সমাজের মধ্যে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সদ্য ঘোষিত জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে (২৯ এপ্রিল) শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক হিসেবে নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর থেকে এ শিক্ষককে নিয়ে এলাকায় নানা আলোচনা সমালোচনা যেন থামছেই না । এরই মধ্যে আবার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে পুরস্কার প্রদান করার সিদ্ধান্ত ও নিয়েছে কালিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস।

জানা গেছে, চাঁচুড়ী পুরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পত্তি অর্জন ও করোনার টীকা শিক্ষার্থীদের দেওয়ার জন্য টাকা আদায় এবং দুর্নীতিসহ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগের বিষয়ে মিথ্যা তথ্য প্রদান করায় শিক্ষক আশরাফুল ইসলামের এমপিও স্থগিত করে গত মার্চ মাস থেকে বেতন-ভাতাদি বন্ধ রয়েছে। এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তার বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে।

জানা যায়,গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের শিক্ষা কর্মকর্তা (মাধ্যমিক-২) মোঃ তরিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে জানানো হয়,দুদক ঢাকা কার্যালয়ের স্মারক নং৩৯১৪৩,তাং-২৬/১০/২০২২,মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং-২২/৫৭,তাং -২৭/১০/২০২২,শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মারক নং-৩৭৩,তাং-৩০/১০/২০২২,উপ পরিচালকের কার্যালয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা,খুলনা অঞ্চল,খুলনার স্মারক নং-১৭-৫৪,তাং-১২/০১/২৩ সূত্রের প্রেক্ষিতে চাঁচুড়ী পুরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম অবৈধ সম্পত্তি অর্জন ও করোনার টীকার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় সংক্রান্ত বিষয়ে মিথ্যা তথ্য প্রদান করায় এমপিও বন্ধ/স্থগিত করার বিষয়ে কারণ দর্শাতে বলা হয়। এরই প্রেক্ষিতে চলতি বছর মার্চ মাস থেকে এ শিক্ষকের বেতন-ভাতাদি বন্ধ রয়েছে। ইতিপূর্বে প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনা নিয়োগ বাণিজ্য, প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎ করে অর্থ হাতিয়ে অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়া,বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ফান্ডের অর্থ আত্মসাৎ ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অর্থ আদায় করাসহ করোনার টিকা রেজিস্ট্রেশন ও নির্ধারিত কেন্দ্রে নেয়ার নামে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নিকট থেকে টাকা আদায় করা ও আর্থিক অনিয়মসহ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ তদন্ত করে গেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা,খুলনা অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর শেখ হারুণ অর রশীদ। চাঁচুড়ী পুরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির বিদ্যোৎসাহী সদস্য ফসিয়ার রহমান মোল্যা অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের পক্ষে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বরাবর দাখিলকৃত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ তদন্ত পরিচালিত হয়।

অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে,২০১৪ সালে অবৈধ উপায়ে নিয়োগ পাওয়া প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্ব নিয়েই সরকারি সকল নিয়ম নীতি লঙ্ঘন করে টাকার বিনিময়ে স্কুলের শিক্ষক ও বেশ কয়েকজন কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে কোটি টাকার হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎ করে অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ফান্ডের অর্থ আত্মসাৎ ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অর্থ আদায় করছেন। বিভিন্ন ব্যয় দেখিয়ে ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়া। প্রতি বছর ভর্তিচ্ছু প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর নিকট থেকে মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রের বাইরে ভর্তি ফরম বাবদ নিয়মিত জনপ্রতি একটি নির্দিষ্ট হারে টাকা আদায় করা হয়। রেজিস্ট্রেশন ‘ফিসহ কম্পিউটার কার্যক্রম খাতে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে বছরে আদায় করা হয় অতিরিক্ত টাকা। মহামারী করোনায় বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে বেতনের সাথে আনুষঙ্গিক চাঁদা তুলেছেন তিনি। এমনকি করোনার টিকায় শিক্ষার্থীর নিকট থেকে টাকা আদায় এবং বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ ভাড়া দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করারও অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ, সভাপতিকে ম্যানেজ করে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য একটি বিদ্যালয়ের এক প্রধান শিক্ষক জানান,‘প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা চলমান। তিনি কীভাবে আবেদন করে শ্রেষ্ঠ হলেন তা আমার জানা নেই। দুর্নীতির তদন্ত চলমান এমন ব্যক্তিকে কীভাবে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচন করা হলো তা সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বিভাগই বলতে পারে। তবে দুর্নীতিগ্রস্ত কোন ব্যক্তিকে যদি তিরস্কারের পরিবর্তে পুর¯কার দেওয়া হয় তা হবে ক্ষতিকারক।

প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম বলেন,‘ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাকে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত করেছেন। কীভাবে করেছেন তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হওয়ায় প্রাথমিকভাবে বেতন-ভাতাদি বন্ধ হওয়ার বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।’

কালিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শাহজাহান মিয়া জানান,‘স্কুল পর্যায়ে প্রধান শিক্ষকের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার গ্রহণে উপজেলা পর্যায়ে একটি মাত্র আবেদন পড়ায় আশরাফুল ইসলামকেই শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ঘোষণা করা হয়েছে। তবে আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের বিষয়টি আমার জানা ছিল না; এ বিষয়টি তাঁকে কেউ জানায়নি।’

জেলা শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন.‘উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচনের বিষয়টি সম্পর্কে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাই ভালো বলতে পারবেন। আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি;তাই প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে অবগত নই। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads